শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি, কালের খবর :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বেশির ভাগ সড়কই এখন ব্যাটারিচালিত টমটম ও রিকশার দখলে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বলছে ব্যাটারিচালিত টমটম ও রিকশা সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ। এসবের রেজিস্ট্রেশনও নেই। ব্যাটারিচালিত তিন চাকার এসব যানবাহনের চালকদের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্সও। তবু অবৈধ এ যানবাহন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহর।
সরজমিন শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের স্টেশন রোড থেকে পূর্বাশা, কালীঘাট রোড থেকে মুসলিমবাগ, নতুনবাজার থেকে সবুজবাগ, গদারবাজার থেকে পশ্চিম ভাড়াউড়া, জগন্নাথের আখড়ার সামনে থেকে শাহজীবাজার, শ্রীমঙ্গল থানার সামনে থেকে ইছবপুরসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় রীতিমতো স্ট্যান্ড করে এসব যানবাহন চলছে।
শ্রীমঙ্গল থানার গেটের কয়েকশ’ গজ দূরেই তৈরি করা হয়েছে টমটম স্ট্যান্ড। অবৈধ এই বাহনটি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো কিন্তু এগুলো বন্ধে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা শহরে এলে এসব টমটম হুট করে গায়েব হয়ে যায়, কর্মকর্তারা ফিরে যাওয়ার পর আবার সড়কে ফিরে আসে টমটমগুলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল শহরে সহস্রাধিক টমটম ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে।
প্রতিদিন মাসোহারা হিসেবে এসব টমটম থেকে ত্রিশ টাকা করে তোলা হয় আর সেই টাকার ভাগ যায় পুলিশসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে। শহরের পর্যটন ব্যবসায়ী এস কে দাশ সুমন বলেন, এই টমটমের কারণে পুরো শ্রীমঙ্গলজুড়ে বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের হবিগঞ্জ সড়ক ও মৌলভীবাজার সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট সৃষ্টি হয়। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলেও পড়ছে এসব টমটম। নিত্যদিন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অনেকে। দুর্ঘটনার পর সহজে পালিয়েও যেতে পারছে এগুলো। চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না রেজিস্ট্রেশন না থাকায়। পর্যটকরাও এই টমটমের চালকদের কাছে হয়রানির শিকার হয়। বেশি ভাড়া দাবি করে তারা।
এদিকে অভিযোগ আছে স্থানীয় শ্রমিক ও মালিক সমিতির প্রভাবশালী নেতা, ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রভাবশালী স্থানীয় নেতা, হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব টমটম।
এ ব্যাপারে পুলিশ পরিদর্শক (ট্রাফিক) রূপন কুমার রায় বলেন, এগুলো পৌরসভা নিয়ন্ত্রণ করবে। রুট নির্ধারণ, ভাড়া নির্ধারণ এবং অবৈধ হলে অভিযান সবই পৌরসভা করবে। বিআরটিএ অনুমোদিত যেসব যানবাহন আছে সেগুলো আমরা দেখি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক টমটমচালক বলেন, প্রতিদিন আমাদের ত্রিশ টাকা করে জমা দিতে হয় না দিলে গাড়ি রাস্তায় নামতে দেয়া হয় না।
টাকাগুলো কে নেয় জানতে চাইলে ওই চালক বলেন, বড়গাড়ির এলাকার সমিতির (কার, মাইক্রোবাস শ্রমিক সমিতি) লোকজন নেয়। পুলিশ নেয় সরকারদলীয় লোকজনও নেয়। এদিকে, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলে ভিন্ন উপায়ে প্রতিমাসে রিকশাগুলোর পেছনে লাগিয়ে দেয়া হয়ে নতুন নতুন কালারের সাইনবোর্ড। শ্রমিক সমিতির অফিস থেকে লাগানো এই সাইনবোর্ড আনতে খরচ হয় ২০০-৩০০ টাকা আর এই সাইনবোর্ড দেখলেই পুলিশ আর সেইসব রিকশাকে আটক করে না। মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) সার্কেল আশরাফুজ্জামান বলেন, মহাসড়ক এসব যানবাহন চলাচল অবৈধ। আমরা নিয়মিত এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি।
মতামত দিন